গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে সামরিক বাজেট কেমনভাবে লুটপাট হয়েছে, তার একটি উদাহরণ হলো ২০১৯-২০ অর্থবছরে সংঘটিত একটি বহুল আলোচিত ঘটনা। উক্ত সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বুলেট তৈরির জন্য হাঙ্গেরি থেকে প্রায় দুই লাখ টন ‘অ্যামিউনিশন গ্রেড কার্ট্রিজ ব্রাস’ আমদানি করে। এই পুরো প্রক্রিয়াটির তদারকিতে ছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান, বিতর্কিত জেনারেল আজিজ আহমেদ। কার্ট্রিজ ব্রাস বলতে বোঝায় এমন একটি ধাতব মিশ্রণ যা প্রধানত তামা (কমপক্ষে ৭৫%) ও দস্তা (প্রায় ২৫%) দ্বারা তৈরি হয়—এই অনুপাত নিশ্চিত না হলে তা দিয়ে গুলি তৈরি করা যায় না। কিন্তু আমদানি শেষে দেখা গেলো, আনা ব্রাসের গুণগত মান ছিল অনেক নিচে—তাতে তামার অনুপাত ছিল ৬০%-এরও কম, অর্থাৎ সেটা ‘অ্যামো গ্রেড’ ছিল না। পরবর্তীতে হাঙ্গেরির সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেখা যায়, তারা যে ব্রাস পাঠিয়েছে তা তাদের হাতে থাকা স্পেসিফিকেশন অনুযায়ীই। বিস্ময়করভাবে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে যে স্পেসিফিকেশন পাঠানো হয়েছিল, সেখানে কোথাও উল্লেখ ছিল না যে এটি ‘প্রিমিয়াম অ্যামো গ্রেড’ হতে হবে। ফলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তাদের দায়িত্ব অনুযায়ী সঠিক পণ্য দিয়েছে এবং পেমেন্টও সেই মান অনুযায়ী হয়েছে। এই ঘটনাটি গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়ার উপক্রম হলে, জেনারেল আজিজ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি চেপে ফেলেন। পরে বাতিল হওয়া সেই বিপুল পরিমাণ ব্রাস গোপনে বেসরকারি ক্রেতাদের কাছে বিক্রির চেষ্টা করা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন হয়। জানা যায়, এর অর্ধেক লভ্যাংশ যায় শেখ রেহানার হাতে, আর বাকি অর্ধেক ভাগ হয় কয়েকজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তার মধ্যে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, যেই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই নিম্নমানের ব্রাস আমদানি করা হয়েছিল, তার মালিক ছিলেন জেনারেল আজিজ আহমেদের ভাই হারিস আহমেদ, যিনি তখন হাঙ্গেরিতে বসবাস করতেন। এই ঘটনার কথা সাংবাদিক সামী ভাই তাঁর “অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন” প্রজেক্টেও তুলে ধরেন। সেখানে হারিস স্বীকার করেন, সেনাবাহিনীর এই ‘বুলেট ধান্ধা’ তিনি হাঙ্গেরি থেকেই পরিচালনা করতেন। ---