জাপানের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান *Japan Space Systems* পরিচালিত ‘ওহিসামা’ (OHISAMA) প্রকল্পটি নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই প্রকল্পের লক্ষ্য—মহাকাশ থেকে সরাসরি পৃথিবীতে সৌরশক্তি পাঠানো, যা শক্তির জগতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করছে। ২০২৫ সালে মহাকাশে পাঠানো হবে ‘ওহিসামা’ নামের একটি ক্ষুদে স্যাটেলাইট। মাত্র ২ বর্গমিটার আয়তনের ফটোভোলটাইক প্যানেলের মাধ্যমে এটি সূর্যের আলো সংগ্রহ করবে ও সেই শক্তিকে মাইক্রোওয়েভে রূপান্তর করবে। এই রূপান্তরিত শক্তি মাটির ওপরে থাকা জাপানের সুওয়া অঞ্চলের একটি রিসিভার স্টেশনে পাঠানো হবে, যার বিস্তার প্রায় ৪০ কিলোমিটার জুড়ে। প্রথম পর্যায়ে স্যাটেলাইটটির উৎপাদন ক্ষমতা হবে প্রায় ১ কিলোওয়াট—যা দিয়ে এক ঘণ্টার জন্য একটি ছোটখাটো গৃহস্থালি যন্ত্র চালানো সম্ভব। যদিও পরিমাণে এটি কম, প্রকল্পটির মূল গুরুত্ব হলো মহাকাশ থেকে স্থায়ীভাবে শক্তি পাঠানোর প্রযুক্তি যাচাই করা। প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায় নিম্ন কক্ষপথে ঘুরতে থাকা এই স্যাটেলাইটটি মেঘলা আকাশ, রাতদিন বা অন্যান্য প্রাকৃতিক বাধা ছাড়াই নিয়মিতভাবে শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম কি না, তা পরীক্ষা করবে। ‘ওহিসামা’ প্রকল্পের ধারণা একেবারে নতুন নয়—১৯৬৮ সালেই মহাকাশ থেকে সৌরশক্তি পাঠানোর ভাবনা উঠে এসেছিল। দীর্ঘ গবেষণা, হালকা উপকরণ ব্যবহারে অগ্রগতি, উন্নত মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎক্ষেপণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এখন এই স্বপ্নকে বাস্তবতার কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। দূর ভবিষ্যতে, জাপান এমন বৃহৎ সোলার স্যাটেলাইট নির্মাণের পরিকল্পনা করছে, যেগুলো ভূ-স্থির কক্ষপথে অবস্থান করবে এবং ১ গিগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে—একটি মাঝারি আকারের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমতুল্য। এর মাধ্যমে আবহাওয়ার বাঁধা ছাড়াই ধারাবাহিকভাবে পরিষ্কার জ্বালানি সরবরাহ সম্ভব হবে। এই প্রকল্প কেবল জাপানকে নবায়নযোগ্য শক্তির পথপ্রদর্শকই করবে না, বরং দূরবর্তী অঞ্চল কিংবা দুর্যোগপীড়িত এলাকায় শক্তি সরবরাহের একটি কার্যকর সমাধান হিসেবেও কাজ করবে। একইসঙ্গে এটি বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।