আজ ২৯ মে, বাংলা চলচ্চিত্র ও নাটকের এক অবিস্মরণীয় কিংবদন্তি হুমায়ুন ফরীদির জন্মদিন। যদি তিনি এখনো among us থাকতেন, তবে এই দিনটিতে ৭৪ বছরে পদার্পণ করতেন তিনি। জন্মের ৭৩ বছর পরেও, তার কৃতিত্বে ভরা জীবন ও শিল্পভাণ্ডার ভক্তদের মনে অম্লান। মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র—তিন অঙ্গনেই আপন স্বাতন্ত্র্যে রাজত্ব করেছেন হুমায়ুন ফরীদি। তার অভিনয়ের দাপট, সংলাপ বলার ভঙ্গি ও চরিত্র গঠনের দক্ষতা আজও দর্শকদের মুগ্ধ করে রাখে। ১৯৮০-এর দশকে তানভীর মোকাম্মেলের নির্মাণ ‘হুলিয়া’ নামক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রূপালি পর্দায় অভিষেক ঘটে তার। এরপর থেকে তিনি একে একে বাংলা চলচ্চিত্রকে উপহার দিয়েছেন একাধিক যুগান্তকারী সিনেমা, হয়ে উঠেছেন এক অনন্য অধ্যায়। ‘মাতৃত্ব’ সিনেমায় অনবদ্য অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে। ২০১৮ সালে একুশে পদকে সম্মানিত হন, যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক। ১৯৫২ সালের এই দিনে, গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া ইউনিয়নের চুয়ারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ুন ফরীদি। তার বাবা এ টি এম নূরুল ইসলাম এবং মা ফরিদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। শিক্ষাজীবন শুরু হয় মাদারীপুরের ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে, বাবার চাকরির সুবাদে। পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়েই তার নাট্যচর্চার শুরু। সেলিম আল দীনের উদ্যোগে ১৯৭৬ সালে শুরু হওয়া নাট্যোৎসবে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। নিজের লেখা ও নির্দেশনায় মঞ্চস্থ নাটক ‘আত্মস্থ ও হিরন্ময়ীদের বৃত্তান্ত’ সেসময়ের আলোচিত মঞ্চনাটক হয়ে ওঠে। তার স্মরণীয় চলচ্চিত্রের তালিকায় রয়েছে: ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘ভণ্ড’, ‘ঘাতক’, ‘ব্যাচেলর’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘দহন’, ‘লড়াকু’, ‘দিনমজুর’, ‘বিশ্ব প্রেমিক’, ‘আজকের হিটলার’ প্রভৃতি। একই সঙ্গে, টেলিভিশন নাটকেও তিনি ছিলেন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘সংশপ্তক’, ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’, ‘নিখোঁজ সংবাদ’, ‘মোহনা’ সহ বহু নাটকে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন তার শিল্পসত্তার জাদু। ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই গুণী অভিনেতা। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৬০ বছর। হুমায়ুন ফরীদির চলে যাওয়া বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যে অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি করেছে, তা আজও অনুভব করি আমরা।